কুষ্টিয়া আদালত প্রাঙ্গণে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি রাজু আহমেদের ওপর হামলা করেছেন দৌলতপুরে তিনজনকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার আসামিদের স্বজনরা। তাকে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছেন হামলাকারীরা। বুধবার (২১ জুন) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কুষ্টিয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দ্বিতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে।
হামলায় অভিযুক্তরা হলেন- দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী গ্রামের জালাল খাঁর ছেলে মাসুদ খাঁ (৩০), একই গ্রামের আক্কাস শেখের ছেলে সামাদ (৬০), নৈমুদ্দিন সিকদারের ছেলে আবু তালেব (৪৫), কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খাজানগর গ্রামের রফিকুল সিকদারে ছেলে বকুলসহ অজ্ঞাত ২০ থেকে ২৫ জন। তারা চিলমারী হত্যাকাণ্ড মামলার আসামিদের পরিবারের লোকজন ও স্বজন।
এ ঘটনায় বুধবার রাতে কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক রাজু আহমেদ। আদালতে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার সাংবাদিকরা।
হামলার শিকার রাজু আহমেদ বলেন, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী গ্রামে তিনজনকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় ৪০ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। এ খবর পেয়ে বিকেল ৫টার দিকে আমি কুষ্টিয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সংবাদ সংগ্রহে গিয়েছিলাম। এর আগে চিলমারী গ্রামে তিনজনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ঢাকা পোস্টে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন করেছি। এ কারণে আসামিপক্ষের ২০ থেকে ২৫ জন আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যার উদ্দ্যেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলা করে। এ সময় তারা আমাকে হত্যার হুমকিও দেন। পরে আদালত থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন আমাকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেন। এ ঘটনায় আমি থানায় জিডি করেছি। আমার ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়াসহ প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
প্রত্যক্ষদর্শী মেজবা উদ্দিন পলাশ বলেন, চিলমারীতে তিনজনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সাংবাদিক রাজু আহমেদ বেশ কয়েকটি নিউজ করেছেন। বুধবার ওই মামলার ৪০ জন আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। এই নিউজের তথ্য সংগ্রহে আদালতে গেলে পুলিশের উপস্থিতিতে রাজু আহমেদকে মারপিট করেন এবং হত্যার হুমকি দেন আসামিপক্ষের লোকজন। আদালতে সাংবাদিকের ওপর হামলা ও হত্যার হুমকি খুবই দুঃখজনক। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি আল-মামুন সাগর বলেন, আদালতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের সামনে হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিক রাজু আহমেদ। এটা আসলেই মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তি চাই। তা না হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আদালত পুলিশের কয়েকজন সদস্য বলেন, আলোচিত চিলমারী হত্যাকাণ্ডের মামলায় ৪০ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আদালতে আসামিপক্ষের লোকজন ও তাদের স্বজনরা সাংবাদিক রাজু আহমেদকে মারপিট করেন এবং হত্যার হুমকি দেন। এ সময় আমরা তাকে আমাদের হেফাজতে নিই এবং সাংবাদিকের ওপর হামলাকারী ও হত্যার হুমকিদাতাদের সরিয়ে দিই। পরে র্যাবের সদস্যরা তাকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেন। আদালতের মধ্যে এমন ঘটনা খুবই দুঃখজনক।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) জহুরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ এপ্রিল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চিলমারী বাজারপাড়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধ, পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মন্ডল গ্রুপের লোকজনের ওপর হামলা করা হয়। ওই সময় মন্ডল গ্রুপের লোকদের ৫টি বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। তাদের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে দিনু মন্ডল, ফারুক ও আকতার মন্ডল নামে তিনজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় গুরুতর জখম ও দগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন প্রায় ২৫ জন।
এ ঘটনার পরদিন ২৮ এপ্রিল মোজাম মন্ডল বাদী হয়ে ৭৩ জনের নামসহ ১০০-১২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন।