প্রায় ৫ বছর ধরে চলছে এলাকায় আধিপত্য। চলছে হামলা ও ভাংচুর। দিনেদিনে গ্রামে মানুষ কমছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও কমছে। এভাবে চলতে থাকলে বিদ্যালয়টি ধ্বংস হয়ে যাবে। বলছিলাম কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের পাহাড়পুর ৩৭ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা।
বুধবার (১৯) জানুয়ারি বিকেল দেড়টাই সরেজমিনে গেলে দেখা যাই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর চেয়ে তিনগুণ বেশি শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
এসময় শুনশান পরিবেশ বিদ্যালয়ে। দেখা যাই ৬ জন শিক্ষক স্কুলের বারান্দায় বসে আছে। আর একজন শিক্ষক পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন। পঞ্চম শ্রেণির কক্ষে গিয়ে দেখা মেলে, মাত্র ২জন শিক্ষার্থী বসে আছে বেঞ্চে। একজন শিক্ষক তাঁদের ইংরেজি পড়াচ্ছেন। আর ব্লাকবোর্ডে লেখা রয়েছে উপস্থিত শিক্ষার্থী ২ জন এবং অনুপস্থিতি ২৫ জন শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, কয়েকদিন ধরে এলাকায় দুপক্ষের আধিপত্য বিস্তারে দুপক্ষের চলছে হামলা ও ভাংচুর। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার বিকেলে এক পক্ষের একজন খুন হয়। খুনের ঘটনায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন রয়েছে। আর হামলা, মামলা ও ভাংচুরের ভয়ে পালিয়েছে গ্রামবাসী। ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আসেনি। তবে চাকুরি বাঁচাতে শিক্ষকরা এসে অলস সময় কাটাচ্ছে।
শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৩৩ সালে প্রায় ৫১ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত ৩৭ নং পাহাড়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের বর্তমানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫৫ জন। বিপরীতে শিক্ষক রয়েছে সাতজন। করোনার কারনে বিদ্যালয়ে বিশেষ পাঠদান চলছে। প্রতিদিন দেড়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত চলে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান। আর বুধবার সকালে ছিল চতুর্থ শ্রেণির পাঠদান। এদিনে পঞ্চম শ্রেণিতে ২৭ জনের মধ্যে মাত্র ২ জন এবং চতুর্থ শ্রেণিতে ৩২ জনের মধ্যে মাত্র ৬ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. তামান্না ইয়াসমিন বলেন, এলাকায় দুপক্ষের সংঘর্ষ চলছে। ভাংচুর ও হামলা চলছে। একজন খুন হয়েছে। তাই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আসেনি। শিক্ষকরা চাকুরি বাঁচাতে প্রাণহাতে নিয়ে বসে আছে। এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাহাড়পুর গ্রামে লস্কর ও মন্ডল গ্রুপের সংঘর্ষ চলে আসছে । সংঘর্ষে গত পাঁচ বছরে সাত জন নিহত হয়েছেন। প্রতিটি সংঘর্ষে এলাকায় ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। নিয়মিত চলে হামলা ও মামলা। হামলা, ভাংচুর ও মামলার ভয়ে গ্রামছাড়া থেকে পরিবার গুলো।
এবিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আধিপত্য বিস্তারে এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। এজন্য শিক্ষকরা আসলেও শিক্ষার্থীরা আসেনি। শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিয়ে ডিপিও স্যারের সাথে কথা চলছে।