সমাজসেবা কার্যালয়ের সংস্কারকাজ শুরুর আগেই ঠিকাদারের মাধ্যমে বিল তুলে ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার ও উপপরিচালকের বিরুদ্ধে।
এমনই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা সমাজসেবা অফিসের সংস্কার কাজে। অভিযোগ উঠেছে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আব্দুল কাদেরের সহযোগিতায় কাজ শেষ না করেই চলতি বছরের ২২ জুন বরাদ্দকৃত অর্থের সবটায় তুলে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে কুমারখালী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার চাপে কিছু কাজ করতে বাধ্য হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
উপপরিচালকের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে কুষ্টিয়ার জেলা ও উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সংস্কার কাজগুলো বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়ে উপপরিচালক আব্দুল কাদের নিজেই করান তার নিজস্ব লোকজন দিয়ে।
কার্যাদেশ সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে উপজেলা সমাজসেবা অফিসের বিভিন্ন রকম সংস্কার কাজের জন্য পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। কাজটি পায় সামাদ অ্যান্ড সন্স নামের কুষ্টিয়ার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বরাদ্দ অনুযায়ী কুমারখালী সমাজসেবা কার্যালয় ভবনের চারটি কক্ষের থাই ফ্রেমসহ চারটি কাঁচের দরজা ও থাই ফ্রেমসহ কাঁচের ১২টি জানালা লাগানো, টয়েলেট ও কক্ষের মেঝেতে টাইলস বসানো, ভবনের নষ্ট হয়ে যাওয়া অংশের দেয়াল ও ছাদের পলেস্তরা উঠিয়ে নতুন করে পলেস্তরা করা ও রং করার কথা উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি শুধু মাত্র তিনটি কক্ষের মেঝেতে টাইলস বসিয়েছে এবং দেয়ালে ঘষামাজা ও ছাদের পলেস্তারা এবং ছাদের কিছু ক্ষতিগ্রস্থ অংশের ঢালাই করে।
কুমারখালী সমাজসেবা অফিসে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দেয়ালগুলোর কয়েকটি জায়গায় পলেস্তরা না উঠিয়েই বালি ও সিমেন্ট লাগানো হয়েছে। তিনটি কক্ষের মেঝেতে টাইলস বসানো হলেও জানালা ও দরজায় সেই পুরাতন কাঠেরই রয়েছে। টয়লেটে করা হয়নি টাইলের কোন কাজ। অফিস কক্ষের দেয়ালগুলোতে রয়েছে পুরাতন রঙই।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জানান, সংস্কার কাজগুলো চুক্তি অনুযায়ী যেভাবে করার কথা সেভাবে করা হয়নি। ঠিকাদার তার ইচ্ছা অনুযায়ী করেছে। কাজ হয়েছে শুধুমাত্র তিনটি কক্ষে টাইলস আর দেয়ালের আর ছাদে অল্প কিছু জায়গাতে কোনরকম পলেস্তরার কাজ করা হয়েছে। আবার এই কাজের আগেই ঠিকাদার তার বিলের পাঁচ লাখ টাকা তুলে নিয়েছিলেন।
এদিকে ঠিকাদার ফয়সাল আহমেদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি আমার চুক্তির বাইরেও কিছু অতিরিক্ত কাজ করেছি। আমি কাজ শেষ করার পর প্রত্যায়ন পেয়েছি। বিল পেয়েছি।
জেলা সমাজসেবা অফিসের উপপরিচালক আব্দুল কাদের তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে পরবর্তীতে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে। তিনি আরও বলেন নিয়ম অনুযায়ী সংস্কারকাজ করা হবে।
এ বিষয়ে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল বলেন, ঠিকাদার নিয়ম অনুযায়ী কাজ করছিলো না। তাকে ঠিকমতো কাজ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু সেই কাজ না করে তারা উল্টো নানাভাবে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে হয়রানি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সংস্কাকার কাজের বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যারকে অবহিত করা হয়েছে। জেলার সমন্বয় মিটিংয়েও বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে।