তাঁরা ফিরে এসে দেখে ঘর নেই তাই তারা এখন ঘর তৈরিতে ব্যাস্ত। বাড়ি নেই অনেক আগেই তাদের বাড়িঘর ভাংচুর করে ঘরের ইট,টিন লুট করে এমনকি বাড়ির মাটি পর্যন্ত ইটভাটা মালিকদের কাছে বিক্রি করা হয়।অবশেষে নিজ বাড়ির আঙিনায় ফিরেছেন তাঁরা , ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি, প্রতিপক্ষ তাদের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছিল। শুধু তা–ই নয়, দিনে দিনে ভাঙা ঘরের ইট, কাঠ ও মাটি পর্যন্ত লুট করা হয়েছে এ ছাড়া বাগানসহ গাছ ও বাঁশগুলো কেটে নেওয়া হয়। এ জন্য তাঁরা ঘর-বাড়ী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।
দেড় বছর পর নিজেদের ভিটায় ফিরলেন তাঁরা। কিন্তু বাড়িঘরের তেমন কিছুই অবশিষ্ট নেই,ঘরে জাইগা মরুভূমিতে রুপান্তর হয়েছে ।ভেতরে গজিয়েছে লতাপাতা। কিছু পাকা দালান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। বাড়ির চারপাশের বড় গাছগুলো হাওয়া হয়ে গেছে। যত দূর চোখ যায়, বাড়ির জাইগাগুলো মরুভূমিতে ছোট ছোট ঘাস গজিয়ে নতুন রুপে সেজেছে।এ চিত্র কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের পাহাড়পুর গ্রামে।
অথচ দেড় বছর আগেও যেখানে মানুষের কোলাহল ছিল। কাঁচা-পাকা অন্তত শতাধিক বাড়ি ছিল। বাস করত পাঁচ শতাধিক মানুষ। অনেক দেরিতে হলেও স্হানীয় সাংসদ ও প্রশাসনের সহায়তায় বাড়িগুলোতে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে। জঙ্গল কেটে পুনরায় আবাসস্থল গড়ার চেষ্টায় পরিবারগুলো। কেউ কেউ তাবু টানিয়ে বসবাস শুরু করেছে
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আধিপত্য বিস্তার, সমাজপতিদের দাপট দেখানো দলাদলি ও উসকানি অসহায়ের উপর প্রভুত্বর বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ৩১ মার্চ ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে খেলোয়াড়দের মারামারি যা উভয় পক্ষের মধ্য ছড়িয়ে পড়ে যা পরবর্তীতে স্হানীয় বাধবাজার পুলিশ ক্যাম্পের হস্তক্ষেপের সমাধানের চেষ্টা করা হয়।
কিন্তু সমাধান না হয়ে তা ধিরে ধিরে বড় আকার ধারণ করে এবং পরবর্তীতে নেহেদ আলী (৬৫) ও বকুল আলী (৫৫) নামের দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নেহেদ আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে ২৮ জনকে আসামি করে কুমারখালী থানায় মামলা করেন। এরপর গ্রেপ্তারের ভয় ও হামলার আশঙ্কায় পালিয়ে যায় দুই শতাধিক পরিবার।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি,নিহত পরিবারের ভাই ভাতিজাদের নেতৃত্বে প্রতিপক্ষ এবং তাদের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছিল। শুধু তা–ই নয়, দিনে দিনে ভাঙা ঘরের ইট, কাঠ ও মাটি পর্যন্ত লুট করা হয়। এ ছাড়া বাগানসহ গাছ ও বাঁশগুলো কেটে নেওয়া হয়।
কিন্তু প্রতিপক্ষের লোকজনের দাবি, ঘটনার পর তিন মাস এলাকায় পুলিশ ছিল। কে বা কারা এ জঘন্য কাজ করেছে, তা তাঁদের জানা নেই।স্হানীয় সাংসদ ও প্রশাসনের সহায়তায় দেড় বছর পর বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে ভুক্তভোগীরা।
বাড়িতে ফেরার পর পাহাড়পুর গ্রামের মৃত হেকমতের ছেলে আলমগীর হোসেন বলেন, তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। ঘটনার দিন তিনি কর্মস্থল থেকে জানতে পারেন, এলাকায় জোড়া খুন হয়েছে। সেই খুনের মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়।
তাছাড়াও জালাল মন্ডলের ছেলে মাসুদ বলেন তিনিও গাজীপুর একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন ঘটনার সময় তিনিও কর্মস্হলেই ছিলেন তবুও তাকে বিরোধী দলের ষড়যন্ত্রে খুনের মামলার অাসামি করা হয়েছে ফলে তিনি চাকুরী বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন।এবং এতোদিন আমাদের জমিজমা তাঁরা দখলে নিয়ে চাষ করেছে ওই গ্রামের রুস্তম আলী শেখের স্ত্রী আলেয়া খাতুন বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকায় চলে যান। এখন তাঁরা বাড়িতে ফিরেছেন। ঘরবাড়ি, আসবাব—কিছুই বাড়িতে নেই। তবু নতুন করে বসবাস শুরু করতে চান তিনি।ভুক্তভোগীরা বলছেন, তুচ্ছ ঘটনায় এলাকায় যা ঘটেছে, তা দুঃখজনক। প্রকৃত দোষীদের বিচার হোক। কিন্তু যাঁরা নিরপরাধ, নির্দোষ; তাঁরা কেন মামলার আসামি হবেন।
ভুক্তভোগী আবদুর রহমান বলেন, ‘আমি একজন কৃষক। আট বিঘা জমিতে চাষাবাদ করি। আমি মামলার আসামি নই, তবু আমার ঘরবাড়ি ভাঙা হয়েছে। নতুন করে নির্মাণকাজ শুরু করেছি।’
শুক্রবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, আগাছায় ভরা বাড়িঘরগুলোর ভগ্নাবশেষ পড়ে আছে। ফিরে আসা পরিবারগুলোর সদস্যরা কেউ কেউ বাড়ির আঙিনায় কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। কেউ বাঁশ কাটছেন। কেউ ঘর তৈরি করছেন। কেউ কেউ কুঁড়েঘর বানাচ্ছেন। পুলিশের টহলগাড়ির পাশাপাশি ৩ জন পুলিশ সদস্যকে সেখানে বসে থাকতে দেখা যায়।
জোড়া খুনের মামলার বাদী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার পরিবার শোকাহত। আমরা কারও বাড়িঘর ভাঙিনি। লুটপাটও করিনি। ঘটনার পর প্রায় তিন মাস এলাকায় পুলিশ ছিল।’
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘আসামিরা জামিন নিয়ে গ্রামে ফিরেছেন। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে। ঘটনা দেড় বছর আগের। সে সময় আমি এখানে ছিলাম না। তাই আগে কী হয়েছে, তা জানা নেই। মিলেমিশে বসবাসের জন্য উভয় পক্ষকেই ডাকা হয়েছে।’
স্থানীয় বাধবাজার পুশিল ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই জামাল মৃধা বলেন এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত পাহাড়পুরো কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি এবং যাহাতে না ঘটে উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় ফোর্স মোতায়েন সহ নিয়মিত টহল পরিচালনা করছি।