কুষ্টিয়ার খোকসার সাজেদা আশরাফ জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত (অবসরপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক। আপাদমস্তক সহজ-সরল একজন নারী। তবে তিনি আর দশটা নারীর মতো না। তাঁর আদর্শে যেমনে গড়ে তুলেছেন অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীকে। রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম নিলেও শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চায় একটা আলাদা নামডাক ছিল পরিবারটির। তারই সুবাধে ছেলেবেলা থেকেই লিখতে ছড়া-কবিতা আর গল্প।
এবার এই মহান মহিয়সী শিক্ষক সাধন করেছেন অসাধ্যকে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরে এবার তিনি পবিত্র আমপারা শরীফকে রূপ দিয়েছেন বাংলাকাব্যে। তবে তাঁর পরিকল্পনা ছিল পুরো কুরআন শরীফের বাংলা অর্থকে কাব্যে রূপ দেয়া। সেটিও তিনি করেছেন- তবে শুধু প্রকাশের অপেক্ষা। যদি প্রকাশ হয় তাহলে তিনিই হবে পবিত্র কুরআন শরীফের বাংলা অর্থকে কাব্যে রূপ দেয়া বাংলা সাহিত্যের প্রথম কবি। ইতিহাসে তাঁর নাম জ্বলজ্বল করবে যুগ থেখে যুগ-যূগান্তর!
কবি সাজেদা আশরাফের কন্যা লেখক ও কবি জান্নাত কেকা বলেন, বেশ অনেক বছর আগে থেকেই দেখতাম আম্মা স্কুল শেষ করে আর সংসার সামলে কুরআন শরীফ নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতেন। প্রথমে গুরুত্ব দেইনি। পরে বুঝতে পারলাম এটা শুধুই তিলাওয়াতের উদ্দেশ্যেই নয়, আছে আরো ব্যাপক কিছু।
কবি সাজেদা আশরাফ ১৯৫১ সালের ২৮ মে কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেন। ৬ বোন ও ৩ ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় তিনি। সবাই-ই প্রতিষ্ঠিত। আহাম্মদ আলী মোল্লা ও উম্মে কুলসুম তাঁর পিতা-মাতা। স্বামী শেখ মো. আশরাফ-উল আলম একজন আইনজীবী ও শিক্ষক। শিক্ষাগত যোগ্যতা : বি, এ; বি-এড; এল, এল-বি; ডি, এইচ, এম, এস।
ছোট বেলা থেকে লেখালেখির প্রতি আগ্রহ তাঁর। বিশেষ করে ইসলাম ও আল-কুরআনকে জানার জন্য প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়েছে। যার পরিণতিতেই সম্পূর্ণ আল-কুরআনের কাব্যানুবাদ। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে লেখা ছাপা হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে দুই কন্যা ও তিন পুত্র সন্তানের জননী।
ইতোমধ্যেই কাব্যে আমপারা বইটির জন্য বিভিন্ন বোদ্ধা তাদের মত দিয়েছেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল কুদ্দুস এই বইটি সম্পর্কে বলেন, কুরআন মাজিদের কাব্য আকারে বাংলা অর্থ বাংলা ভাষাভাষীদের মাঝে প্রায় অনুপস্থিত বললেই চলে। অথচ দাওয়া এবং ইরশাদ তথা আল্লাহর দ্বীনের প্রচার-প্রসার কর্মে আল্লাহর পথে মানুষকে লিখনী-বক্তব্য ইত্যাদির মাধ্যমে আহ্বানের ক্ষেত্রে এ জাতীয় পুস্তকের প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে। তাছাড়া জ্ঞানের সর্বোত্তম উৎস আল-কুরআনকে সকল মানুষের কাছে সহজ সরলভাবে আকর্ষনীয় পন্থায় পৌঁছে দেওয়া একটি শাশ্বত প্রয়োজন, বর্তমান সময়েরও প্রচণ্ড দাবি।
তিনি আরো বলেন, সার্বিক বিবেচনায়, মুহতারামাহ’র এমন উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়।আমি আমপারার কাব্যানুবাদ অংশটুকু দেখার চেষ্টা করেছি। আল্লাহ পাক সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বোত্তম পুরস্কান দান করুন। আমি কাব্যাকারে লেখা কুরআন মাজিদের আমপারার বাংলা অর্থ গ্রন্থটির বহুল প্রচারণা কামনা করি।
বইটি প্রকাশের পর লেখক সাজেদা আশরাফ বলেন, ভোরবেলা ফজরের নামাজের পর আমার মা পবিত্র কুরআন শরীফ তেলাওযয়াত করতেন। নিম্নস্বরে মধুর সুরে তেলাওয়াত করতেন। বেহেশতি শান্তিতে মনটা ভরে যেতো তখন। মনে মনে বলতাম এমনি সুরেই আমিও তেলাওয়াত করব। একটু বঢ় হওয়ার পর আমার আব্বা আমাদের জন্য একজন হাফেজ সাহেব রাখেন। প্রথম দিনই উনাকে বলেছিলাম অর্থসহ পড়ানোর জন্য। যাহোক উনি কথাটার অত গুরুত্ব দেননি। আমারও শেখা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, আকাঙ্খা আমার মন থেকে হারিয়ে যায়নি বরং বেড়েছে দিনে দিনে। অন্ধের মতো কিছু না বুঝে তেলাওয়াত আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই বাংলা অর্থসহ কুরআন শরীফ কিনি। পড়ে মন ভরে না। মন চায় নিজে জেনে অর্থ বুঝে পড়তে কিনলাম আরবি বাংলা অভিধান। শব্দার্থসহ আল-কুরআন। বিভিন্ন লেখকের লেখা আল-কুরআনের অভিধান। চেষ্টা করে যেতে লাগলাম।
সাজেদা আশরাফ বলেন, এরই মধ্যে আমার মনে আরও একটা ইচ্ছা জাগলো। কুরআন তিলাওয়াত করতে করতে দেখলাম আল্লাহ্পাক আয়াতগুলো একটির সঙ্গে আর একটি মিলিয়ে নাযিল করেছেন ঠিক কাব্যিক ছন্দে। মুগ্ধ হয়ে যেতাম আমি এই রচনাশৈলীর মাধুর্যে। আমার মনের মধ্যে ঢুকলো একটা স্বপ্ন। ভাবলাম আমি আমার মতো করে আল-কুরআনকে আয়াতের সঙ্গে আয়াত মিলিয়ে কাব্যিক ধারায় অনুবাদ করব।
কাব্যে আমপারা কবি বলেন, যদিও এটা একটা দু:সাহস তবুও আল্লাহপাকের কাছে তৌফিক চাইলাম। সাহায্য চাইলাম। আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের এই দু:সাহস যেন সফলতা পায়। যেন ক্ষমা করে দেন আমার স্পর্ধাকে। শুরু করলাম তাঁর নামে। শুরু করে দেখলাম অভিধানিক আর শব্দার্থ পড়ে যে জ্ঞান আমি অর্জন করেছি তা এতবড় একটা কাজের জন্য যথেষ্ট না বরং দুরূহ। সাহায্য চাইলাম বিশ্বজগতের প্রভুর কাছে যিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন কলমের সাহায্যে যা সে জানত না।
আমপারার বাংলা অনুবাদের প্রুফ দেখেছেন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মো. নাছির উদ্দিন।
প্রিয় পাঠক, মূল্যবান এই বইটি পাওয়া যাবে খোকসার বিভিন্ন লাইব্রেরিতে। হাদিয়া রাখা হয়েছে ১৩৫ টাকা। ঢাকা থেকেও সংগ্রহ করা যাবে। বইটি সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ করুন- শামস আল-তামাশ সান, মোবাইল নম্বর: ০১৭২২ ৬৩৬২৯৩।