বিভাগীয় নিদের্শনা অনুযায়ী মাগুরা গণপূর্ত বিভাগে বদলি হলেও গেল দুই বছর ধরে অফিস করেন কুষ্টিয়া গণপূর্ত দপ্তরে উপ-সহকারী প্রকৌশলী অনুপ কুমার সাহা। আর এই অসাধ্যকেই সাধন করেছেন কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে।
তার ক্ষমতার অপব্যবহারে গণপূর্তের ঠিকাদাররা তার কাছে জিম্মি। সূত্রটি জানায়, কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা অনুপ কুমার সাহা ২০১৮ সালে কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগে যোগদান করেন। সরকারী বিধি অনুযায়ী যে জেলার বাসিন্দা। সে জেলায় অন্তত সরকারী চাকরি করতে পারবেন না। কিন্তু সরকারী এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে করোনা সংকটের মধ্যেও বহাল তবিয়তে তিনি কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগে যোগদান করে নানা অনিয়ম দুর্নীতি সাথে জড়িয়ে পড়েন। অফিসের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ভুয়া বিল ভাউচারসহ নানা অনিয়ম করেন তিনি।
ধর্মীয় পরিচয়ে তিনি সনাতনী হলেও তার ছাত্র জীবনে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, তিনি মনে প্রাণে জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী এবং সেই মনা সহপাঠিদের সাথেই তার সখ্যতা ছিল বেশি। সেই সময় থেকে অর্থের প্রতি দারুণ একটা ঝোঁকও ছিল তার। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগে যোগদান করে কাজের প্রতি কমিশন বাণিজ্য চালু করেন। গণপুর্ত বিভাগের তালিকাভূক্ত ঠিকাদারদের বিল আটকে দিয়ে বড় ধরনের কমিশন বানিজ্য করেন।
এ কাজ করেই তিনি থেমে থাকেন না। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপবিভাগীয় প্রকৌশলীদের কমিশনও দিতে বলেন। নয় তো কাজের কার্যাদেশ ও বিল হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। গত ২০২০ সালের ১৯ জুলাই প্রধান প্রকৌশলী, গণপূর্ত অধিদপ্তর, ঢাকা স্বাক্ষরিত পত্রে গত ২০২০ সালের ২৬ জুলাইর মধ্যে দায়িত্বভার হস্তান্তর করে নতুন কর্মস্থল মাগুরা গণপূর্ত বিভাগে যোগদান করার কথা বলা হলেও তিনি কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগে বে-আইনিভাবে নিয়মিত অফিস করে চলেছেন। তার এ কর্মকান্ডের কথা কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী ও ঠিকাদারবৃন্দ অবগত আছেন।
তার এসব অপকর্ম কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের সিসি টিভি ফুটেজ দেখলে প্রমাণ পাওয়া যাবে বলেও সূত্রটি জানায়। সূত্রটি বলছে, এখানেই থাকেননি উপসহকারী প্রকৌশলী অনুকুমার সাহা। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিয়ম বর্হিভূতভাবে গত গত ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, যশোর গণপূর্ত সার্কেল, যশোর অনুপ কুমার সাহাকে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী সম্পসারিত উন্নয়ন কার্যক্রম শীর্ষক প্রকল্পসহ নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশ মোতাবেক অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প তদারকির জন্য নিজ দায়িত্বের পর অতিরিক্তি দায়িত্ব প্রদান করে একটি অফিস আদেশ করা হয়। কিন্তু তার মূল দায়িত্ব মাগুরা গণপূর্ত বিভাগে থাকলেও সে দায়িত্বের প্রতি দায়িত্বশীল না হয়ে তিনি শুধু কমিশন বাণিজ্যে কোটিপতি হওয়ার বাসনায় কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগে অবস্থান করছেন।
সূত্রটি বলছে, অফিস আদেশে একটি প্রকল্পের তদারকির কথা বলা থাকলেও তিনি বেআইনিভাবে মেডিকেল কলেজের বিল, কুষ্টিয়া জেলায় নতুন সার্কিট হাউজ নির্মাণ প্রকল্পের বিলসহ বিভিন্ন কাজের বিল সাক্ষর করেন টু পাইসের বিনিময়ে। এই উপ-সহকারী প্রকৌশলীর নামে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা হাসপাতালে কাজ না করিয়ে ঠিকাদারের সাথে টাকা ভাগাভাগি করার অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া তিনি উপ-সহকারী প্রকৌশলী মেহেরপুর ও মাগুরা গণপূর্ত বিভাগে কর্মরত থাকা অবস্থায় সিজিএম আদালত ভবন নির্মাণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অনিয়মের অভিযোগে দুদকে তলব করলেও ক্ষমতার দাপটে বারবার পার পেয়ে যান তিনি।
এমনকি মাগুরা গণপূর্ত বিভাগে কর্মরত থাকা অবস্থায় ভূয়া বিলের পরিমাপ বহি গায়েব করার অভিযোগ পাওয়া যায় এই উপ-সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।
এছাড়াও তিনি প্রতি বছর তার দামী বাইক পরিবর্তন করেন জোর গলায় বলেন এক বছরের বেশি বাইক চালানো যায় না। সুত্রটি বলছে, উপ-সহকারী প্রকৌশলী অনুপকুমার সাহা বিভিন্ন জেলায় জনগনের করের টাকা তছরুপ করে অনিয়ম দুর্নীতি করে নামে বেনামে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
এ সব বিষয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী অনুপকুমার সাহার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে জানান, তার পোষ্টিং মাগুড়ায় হলেও কুষ্টিয়া শিলাইদহ কুঠিবাড়ীতে চলমান প্রকল্পের জন্য তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে তিনি কুষ্টিয়া আছেন।
আর কমিশন বাণিজ্যে কোটিপতি, ঠিকাদারদের জিম্মি করা এসব তথ্য সঠিক নয় বলে তিনি দাবী করেন। এমন একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে কুষ্টিয়া গণপুর্ত বিভাগের মত একটি গুরুত্বপুর্ণ দপ্তর জেলাবাসীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হবে এটি কারো কাম্য নয়।
এ ব্যাপারে অনুপ কুমার সাহার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।