ক্ষমতায় থাকা কালের দুর্নীতি, অযোগ্যতা, ইউনিয়নের মানুষের সাথে খারাপ আচরণ সহ নানা কারণে ভোটাররা প্রার্থীর প্রতি মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি ফিলিপনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের। বলা হয়, নৌকার প্রার্থী ফজলুল হক কবিরাজের জন্য উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মরিয়া হয়ে কাজ করলেও তাঁকে ভোটে জেতানো সম্ভব হয়নি। দাবি করা হয়, নির্বাচনে পরাজিত হয়ে এবং ব্যক্তিগত রাজনীতির নাস্তানাবুদ অবস্থা বুঝতে পেরে সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশাহ সহ অন্যান্যদের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজের লজ্জা ঢাকতে চাইছেন ফজলুল হক কবিরাজ। আবার, সাংসদ বাদশা’র বিরুদ্ধে করা অভিযোগের কোন প্রমাণ নেই পরাজিত ফজলুল হকের কাছে।
সম্প্রতি সংসদ সদস্য (কুষ্টিয়া-১) আঃকাঃমঃ সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ এমপি ও স্থানীয় অন্যান্য নেতাদের ঘিরে গেল ইউনিয়ন নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ মনোনীত পরাজিত প্রার্থী ফজলুল হক কবিরাজ। এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পত্র কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগেও দেন তিনি। এ খবর প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমে।
ফজলু কবিরাজের অভিযোগে বলা হয় ২৮ নভেম্বর নির্বাচনে বিজয়ী নইমুদ্দিন সেন্টু বিএনপির নেতা। ফজলুল হক কবিরাজ গণমাধ্যম এবং অন্যান্য জায়গায় দাবি করছেন সেন্টুর স্বজনদের কাছে থেকে টাকা ও ফ্ল্যাট নিয়ে ফজলুল কবিরাজ কে হারিয়েছেন এমপি ও ইউনিয়নের অন্যান্য নেতারা।
সম্মেলনে ফিলিপনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকে সাথে নিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে পরাজিত ফজলুল হক প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে। সংসদ সদস্যের (বাদশাহ’র) বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মনগড়া গল্প বলে দাবি করেন তিনি।
এ সময় তিনি আরও বলেন, বাদশাহ্ এমপি ২০১৭ সালে রিয়েল স্টেট কোম্পানি থেকে রাজধানীতে একটি ফ্ল্যাট কেনা শুরু করেন ২০২০ সালে ফ্ল্যাটের টাকা পরিশোধ হলে পরবর্তীতে ২০২১ সালের মে মাসে সেটি নিবন্ধন করা হয়। এর আগে এমপি বাদশাহ্ ভাড়া করা বাসায় থেকে তার আইনজীবী পেশার কাজ করে আসছিলেন। গেল আড়াই বছরের বেশি সময় তিনি স্ব পরিবারে রাজধানীতে ও-ই বাসায় থাকেন। এমন বিষয় নিয়ে অবান্তর মিথ্যাচারের জন্য এলাকাবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান নইমুদ্দিন সেন্টু বর্তমানে আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী, ফিলিপনগর এলাকার আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে কাজ করলেও দীর্ঘ বছর ধরে সেন্টু নৌকার জন্য কাজ করে আসছেন। প্রয়াত নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি আফাজ উদ্দিন আহমেদের হাত ধরে সেন্টুর আওয়ামী লীগে যোগদান এবং এবারের নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে স্বতন্ত্র ভোট করায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার আদেশ দেয়া হয়েছে। এতকিছুর পরেও তার বিরুদ্ধে বিএনপি তকমা লাগিয়ে নিজে পাশকাটিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টার নিন্দা জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
ফজলুল হক কবিরাজের নিজ বংশেই আঃলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা তার পরাজয়ের অন্যতম কারণ বলে দাবি করা হয়। বলা হয়, ফজলুল হকের চাচাতো ভাই ওরুশ কবিরাজ উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতার মদদে ভোটে বিদ্রোহী হোন।
ফিলিপনগর ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ এমপি, সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন রিমন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুল আসকার হাসু সহ উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার বসবাস। সেক্ষেত্রে ফজলুল হকের নৌকার পরাজয়ে এইসব নেতাদের দোষারোপ হাস্যকর বলে বক্তব্য দেন সম্মেলনের আহ্বায়ক। তারা বলেন, সুষ্ঠু ভোটে জনগণ তাদের রায় দিয়েছে। শুধুমাত্র বিজয়ী প্রার্থী সেন্টুর কাছেই নয়, বিভিন্ন কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজের কাছেও পরাজিত হয়েছে।
সম্মেলনে দাবি করা হয়, একটি মহল ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে ফজলুল হক কে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করে দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করে বিএনপি-কে শক্তিশালী করতে চাইছে। নৌকার পরাজিত প্রার্থী ফজলুল হকের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তারা বলেন, সর্বনাশী খেলা বন্ধ করুন।
সাম্প্রতিক ইউপি নির্বাচনে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টিতে পরাজিত হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। বিজয়ী হয় স্বতন্ত্ররা যাদের মধ্যে ৯জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
ফিলিপনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক কবিরাজের সাম্প্রতিক অসংলগ্ন কথাবার্তার অভিযোগ এনে রোববার বিকালে ফিলিপনগর দারোগার মোড় এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। এসময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সরদার আতিয়ার রহমান আতিক, ছাদিকুজ্জামান খান, ইলিয়াস হোসেন, মাহবুবুর রহমান, মনি সরকার, উপজেলা যুবলীগ নেতা ওয়াসিম কবিরাজ সহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, ভোট অনুষ্ঠান ১৫ দিন হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে কোন অভিযোগই দেননি ফজলুল হক কবিরাজ। অভিযোগ আছে, গণমাধ্যম আর সংগঠনে বিভ্রান্তিকর মনগড়া তথ্য দিচ্ছেন তিনি। এমন পরিস্থিতিকে ভোটের করুন পরাজয়ে প্রলাপ বলে মন্তব্য করছেন ফিলিপনগরে স্থানীয়দের অনেকে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা গোলাম আজম বলেন, ফিলিপনগরের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফজলুল হক কবিরাজ আমাদের কাছে লিখিত বা ফোনে কোন অসন্তুষ্টির অভিযোগ জানাননি।
২৮ নভেম্বর নির্বাচনে ২৫শ’ এর বেশি ভোটে নৌকা প্রতীক নিয়ে পরাজিত হোন দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপ নগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হক কবিরাজ।
এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা অভিযোগের তীর যে ফজলুল হকের দিকে, তিনি জানান এমপির বিরুদ্ধে ফ্ল্যাট-টাকার বিনিময়ে তাকে (ফজলুল হক কে) ভোটে হারানোর যে অভিযোগ, সেই অভিযোগের কোন প্রমাণ তার কাছে নেই। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন কেবল লোক মুখে শুনে।