একেই কি প্রেম বলে বা হৃদয়ের টান? দুজনই অসুস্থ ছিলেন, ছিলেন আইসিইউতে। স্ত্রী সাজেদা হক চলে গেলেন বৃহস্পতিবার। তোফাজ্জল হককে জানানো হয়নি সে কথা। আসলে জানানোর মত অবস্থায়ও ছিলেন না তিনি। কিন্তু ঐ যে বললাম প্রেম বা হৃদয়ের টান। তোফাজ্জল হক বুঝে গিয়েছিলেন তার জোড়া পাখি উড়ে গেছে, যেতে হবে তাকেও। মাঝখানে মাত্র দুদিনের বিচ্ছেদ। আবার তারা মিলে গেলেন অনন্তলোকে।
এই দম্পতিকে আমি ঈর্ষা করি। তোফাজ্জল হোসেন চাকরি করতেন রেলওয়েতে, মধ্যবিত্তের টানাটানির সংসার। অর্থে টান থাকলেও চিন্তা ছিল রাজকীয়। এই দম্পতি কতটা রাজকীয় তা তাদের সন্তানদের নাম দেখলেই টের পাবেন। ছেলেদের নাম হলো- নবাব, বাদশাহ, সুলতান, রাজা, সম্রাট। মেয়েদের নাম- সুলতানা, রাজিয়া, রাণী।
এই দম্পতিকে রাজকীয় না বললে আর কাকে বলবেন। রাজা ভাইয়ের সাথে মজা করা যেতো না। আমরা সম্রাটের সাথে মজা করতাম, এরপর ভাই বোন হলে তো আপনার বাবা মা নাম সঙ্কটে পরে যেতেন।
সন্তানদের রাজকীয় স্বাচ্ছন্দ্য হয়তো দিতে পারেননি, তবে রাজকীয় ভালোবাসা দিয়েছেন, আর দিয়েছেন শিক্ষা। সন্তানদের সবাই সুশিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত। রাজা আর সম্রাট সাংবাদিকতার দুই তারকা। বাবা-মা একসাথে হাসপাতালে, পরে আইসিইউতে যাওয়ায় অসহায় সম্রাটের সাথে প্রায় প্রতিদিনই কথা হয়েছে, রাজা ভাইয়ের সাথেও কথা হয়েছে। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর আমার আর সাহস হয়নি, তাদের সাহস দেয়ার। ফোন করে আমি কী বলবো?
মাঝে মাঝে আমরা মানুষ অসহায় হয়ে যাই। চোখের সামনে প্রিয়জন চলে যাচ্ছে, আমাদের যেন কিছুই করার নেই।
মৃত্যু অমোঘ, মৃত্যু অনিবার্য। জানি, তবু জানি; তোফাজ্জল-সাজেদা অনন্তলোকে সাজাবেন তাদের নতুন সাম্রাজ্য।
লেখক : প্রভাষ আমিন, বার্তা প্রধান, এটিএন নিউজ