দশকে বারংবার প্রতিশ্রুতি পেলেও বাস্তবায়ন হয়নি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল খুলনা বিভাগের সর্ববৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ সরকারিকরণের প্রতিশ্রুতি। ৩০ বছরে ধরে রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব পালনকারী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতিশ্রুত এ দাবিটি অবহেলিত আজও।
উল্লেখ্য যে, ১৯৯৩ সালের ২১ জানুয়ারি কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ মাঠে এক জনসভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলাবাসীর দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন এবং ক্ষমতায় গেলে কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ জাতীয়করণের ওয়াদা করেন। এ ছাড়া তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে তৎকালীন সময় মহান জাতীয় সংসদে এ কলেজটি সরকারি করণের জোরালো দাবি তোলেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম পতাকা উত্তোলনের প্রাঙ্গণ কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজে প্রায় ৭০০০ শিক্ষার্থী, দেড় শতাধিক শিক্ষক কর্মচারী নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের সব উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ কলেজগুলো জাতীয়িতকরণ শুরু হওয়ায় ফের পুরোনো দাবির বাস্তবায়ন চান কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টরা।
১৯৬৮ সালে তৎকালীন কুষ্টিয়ার এস.ডি ও মি. ইয়াহিয়া এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত প্রায় চার একর জমির উপর ৯৫ কক্ষ বিশিষ্ট বিশাল অবকাঠামো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ। জাতীয়করণের যথেষ্ট সহায়ক পরিবেশ থাকলেও এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সরকারি নীতি নির্ধারকদের সুদৃষ্টির অভাবে সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে।
বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এ কলেজটিতে বাংলা, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, দর্শন, সমাজ বিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইসলামের ইতিহাস, ইতিহাস, হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিংসহ বারোটি বিষয়ে অনার্স কোর্স এবং বাংলা, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, দর্শন, সমাজ বিজ্ঞান ও অর্থনীতিসহ পাঁচটি বিষয়ে মাস্টার্সসহ স্নাতক (পাস কোর্স) পর্যায়ে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও কলা বিভাগ চালু আছে। এ ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরও এখানে ভর্তি নেওয়া হয়।
কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর হতে বেশ কয়েকবার জাতীয়করণের প্রারম্ভিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু সেই প্রক্রিয়াটি কার্যকরভাবে বেশি দূর এগুয়নি। দেশের সব বড় জেলা সদরে উচ্চ মাধ্যমিক ও অনার্স শ্রেণির জন্য ৪ কিংবা ততোধিক সরকারি কলেজ থাকলেও এক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত চরম বৈষম্য ও অবহেলিত কুষ্টিয়াবাসী শহরের৷ কলেজটিকে নিয়ে।
উল্লেখ্য যে ইতিপূর্বে কুষ্টিয়ায় জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে কলেজটির ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আজগর আলী কলেজটি জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরেন।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো. হাবিবুল ইসলাম বলেন, “এক সময় প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নানাবিধ সমৃদ্ধির লক্ষ্যে দাবি তুলতো শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীরা নানা কর্মসূচি পালন করতো। পর্যায়ক্রমে সেই দাবিও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন মহল সাড়া দিতেন। এখন সেই গঠনমূলক ছাত্র সংগঠন নেই বলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মনোরম পরিবেশ ও অবকাঠামো উন্নয়নের দ্বার অনেকটাই রুদ্ধ।
এ প্রসঙ্গে থানাপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা ও সম্মিলিত সামাজিক জোটের সমন্বয়ক এবং কুষ্টিয়া ক্রীড়া সংসদের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট মোঃ মুহাইমিনুর রহমান পলল বলেন, ” কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজটি শহরের ঐতিহ্য। এটি সরকারি করণ একমাত্র মাননীয় সংসদ জনাব মাহবুবউল আলম হানিফের দ্বারাই সম্ভব। কারণ কুষ্টিয়াবাসীকে তিনি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি যা যা দিয়েছেন, তার অধিকাংশই ইতিমধ্যে দৃশ্যমান এবং চলমান। এমনকি নেতা প্রতিশ্রুতির বাইরেও অনেক প্রকল্প সময়ের প্রয়োজনে কুষ্টিয়া শহরবাসীর জনক্স বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। শুধু কলেজ নয়, সমগ্র থানাপাড়াবাসীরও প্রাণের দাবি ইসলামিয়া কলেজটির সরকারিকরণ।
আগামীকাল নবীনবরণ ও অভিভাবক সমাবেশ উপলক্ষ্যে প্রধান অতিথি হিসেবে কলেজে পদার্পণ করবেন কুষ্টিয়া উন্নয়নের রুপকার, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের মাননীয় সাংসদ জনাব মাহবুবুল আলম হানিফ। তার আগমনে পুনরায় আশাবাদী কলেজের সকল শিক্ষকবৃন্দ ও ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকগণ। সকলের একটাই প্রত্যাশা কুষ্টিয়া উন্নয়নের ছোয়া লাগুক ইসলামিয়া কলেজ প্রাঙ্গণে৷ দীর্ঘদিনের দাবিটি শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে নয় দায়িত্ব নিয়ে তা বাস্তবায়নের ঘোষণা চাই সংশ্লিষ্টরা।