আমাদের একটা সুখী পরিবার ছিল। আব্বা মা, ভাইবোনদের পরিবার- সবাইকে নিয়ে এক সাথে থাকার চেষ্টা করতাম। প্রতি বছর ঢাকার বাইরে কোথাও পারিবারিক মিলনমেলা হতো। তার ছবি দেখে আমাদের বন্ধনের প্রশংসা করতেন অনেকে।
সবাইকে এক সুতোয় বাঁধার এই কাজে নেতৃত্ব দিতেন পরিবারের বটবৃক্ষ আমার আব্বা। তাঁর উৎসাহ উদ্দীপনা ওনার নাতি-নাতনীদেরও হার মানাতো। তবে সবকিছু আবর্তিত হতো পরিবারের প্রাণভোমরা মা’কে ঘিরে। মাত্র দুই দিনের ঝড়ে আমাদের সেই বটবৃক্ষ উপড়ে গেছে, উড়ে গেছে সেই প্রাণভোমরা।
অসংখ্য মানুষ নানাভাবে আমাদের সমবেদনা জানিয়েছেন। তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। শেষ পর্যন্ত আমরা এই ভেবে সান্ত্বনা পাবার চেষ্টা করছি যে, প্রায় এক সঙ্গে আব্বা-মার চলে যাওয়াটা তাদের জন্য ভালোই হয়েছে। ৬৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে তাঁরা ছিলেন পরস্পরের সবচেয়ে বড় অবলম্বন। তাদের একজনের আগে চলে যাওয়াটা আরেকজনের পক্ষে সহ্য করা কঠিন হতো।
আল্লাহ তাই বোধ হয় দুদিনের ব্যবধানে দু’জনকে নিয়ে গেলেন, অচেতন থাকায় কেউ কারো খবর জানতেও পারলেন না, সবচেয়ে আপন, প্রিয় সঙ্গীকে হারানোর যন্ত্রণায় কাউকে পুড়তেও হলো না। গ্রামের ছায়া সুনিবিড় বাড়িতে পাশাপাশি তাদের শুইয়ে রেখে এসেছি।
সৃষ্টিকর্তার কাছে এখন শুধু প্রার্থনা করছি- দুনিয়ায় অসুখ বিসুখে যেহেতু তারা অনেক কষ্ট পেয়েছেন তাই পরপারে যেন শান্তিতে থাকতে পারেন। তিনি যেন ফের এই জোড়াকে মিলিয়ে দেন, তারা যেন বেহেস্তের বাগানে হাত ধরাধরি করে হাঁটতে পারেন।
লেখক: বার্তা প্রধান, মাছরাঙা টেলিভিশন; সভাপতি, কুষ্টিয়া সাংবাদিক ফোরাম ঢাকা; সহসভাপতি, জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং চেয়ারম্যান, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার