শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:৫৩ পূর্বাহ্ন

আগুনে ঝলসানো শরীর নিয়ে বাবার কাছে বাঁচানোর আত্মনাদ মিতুর

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৩০১ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: শনিবার, ১০ জুলাই, ২০২১, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন

 

একটি কল। একটি জীবনের শেষ আর্তনাদ। বেঁচে থাকার আকুতি। ‘আব্বা আমারে বাঁচাও, আর এক মিনিট এইহানে থাকলে আমি মইরা যামু, লগের তারা অনেকেই মইরা গেছে। কয়েকজন বাইচ্চা আছি আমরা। আমাগো উদ্ধার করো, আব্বা আমাগো বাইর করো’। ১৯ বছর বয়সী কন্যা মিতুর আর্তনাদ শুনে কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছিলো পিতা বেলাল হোসেনের। মেয়ে আর্তনাদ করছে বাবার কাছে।

 

এই আর্তনাদ বাঁচার জন্য। কী করার আছে তার, তিনি জানেননা। তবু চিৎকার করে বলেছেন, ‘মাগো ও মা আমি আইতাছি, আল্লাহ আল্লাহ কর মা। তোর কিচ্ছু হবে না। আগুন তোরে কিচ্ছু করবে না মা।’ কিন্তু আগুন কী তা বোঝে। ফোনের ওপর প্রান্তে তখন নিস্তেজ গোঙ্গানির শব্দ পান বেলাল। ভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বেলালের শরীরেও যেনো আগুন লেগেছে। দৌড়ে ভবনে ঢুকতে চান তিনি। কোনো বাধা মানতে চান না। কিন্ত পুলিশ আর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের বাধায় তা হয়ে উঠেনি। ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। বেলাল কল দেন বারবার। না, কেউ রিসিভ করে না। ফোন ধরে কেউ আব্বা বলে ডাকে না তাকে।

১৫ মিনিট পর মেয়ে মিতুর মোবাইলফোনটি বন্ধ পান তিনি।

 

 

 

বৃহস্পতিবার, রাত তখন আটটা। ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপের সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডের কারখানায়। ওই কারখানা ভবনের চতুর্থ তলায় কাজ করতেন মিতু।

 

পাশের পোশাক কারখানার শ্রমিক বেলালের দুই সন্তান। বড় মেয়ে খাদিজাও কাজ করেন ওই কারখানায়। রাতের শিফটে ডিউটি থাকায় খাদিজা তখন ছিলেন বাসায়। মিতু ছিলেন ডিউটিতে। স্বল্প আয়ের সংসার বেলালের। তিন বছর আগে ওই কারখানার কাজে যোগ দিয়েছিলেন তার দুই মেয়ে। ঈদের পরেই দুই মেয়েকে ধুমধাম করে বিয়ে দেয়ার ইচ্ছে ছিল পিতা বেলালের। নিজেদের বিয়েতে দরিদ্র পিতার যেনো আর্থিক কষ্ট পোহাতে না হয়, ঋণগ্রস্ত হতে না হয় সেজন্য ওভার টাইমও টিউটি করতেন মিতু ও খাদিজা। গতকাল ৫২ জনের লাশ পাওয়া গেলেও আগুনে পুড়ে যাওয়ায় চেনা সম্ভব হয়নি মিতুকে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গড়াগড়ি দিতে দিতে ‘মা ও মারে..’ বলে বুকফাটা চিৎকার করছিলেন বেলাল। বেলালের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার নসিপুর গ্রামে। দীর্ঘদিন যাবত পরিবার নিয়ে রূপগঞ্জে থাকেন তিনি।

 

ফায়ার সার্ভিসের ১৮ ইউনিট ২২ ঘণ্টার চেষ্টার পর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সেজান জুস কারখানার আগুন। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জের ভুলতা কর্ণগোপ এলাকায় কারখানাটিতে আগুন লাগে।

 

 

 

ফায়ার সার্ভিসের প্রথমে ১১টি পরে আরো সাতটি ইউনিটসহ মোট ১৮টি ইউনিটের সদস্যদের টানা প্রচেষ্টায় শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিভে যায়।

 

ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্মন শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার আগুন লাখার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। পরে আসে আরো সাতটি ইউনিট। টানা দীর্ঘ ২২ ঘণ্টা তাদের প্রচেষ্টায় শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে আগুন সম্পূর্ণ নিভে যায়।

 

 

ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা বলেন, এ পর্যন্ত ৫৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো ৪৫ জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছে। ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় আগুন নেভানোর পর ওই সব ফ্লোরে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। লাশের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর