সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫৫ অপরাহ্ন

অ‌স্তিত্ত্ব বিলী‌নের প‌খে কুমারখালীর লালন আবাসন প্রকল্প

মোশারফ হোসেন কুমারখালী কুষ্টিয়া / ২৯১ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: শনিবার, ২৪ জুলাই, ২০২১, ২:৩৫ অপরাহ্ন

কুমারখালী আবাসন প্রকল্প নির্মাণের একযুগ পেরিয়ে গেলেও সংস্কারের অভাবে অধিকাংশ ঘরই এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এসব ঘরের টিনের চালা মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। টিন গুলো ছিদ্র হয়ে , দেখা যায় আকাশ। আর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে ভিজে যায় ঘরের সবকিছু। কনকনে শীতে ভাঙা বেড়া দিয়ে হু হু করে প্রবেশ করে ঠাণ্ডা বাতাস। এছাড়া আবাসনের বেশিরভাগ টয়লেট ও গোসলখানা ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

এখন লালন আবাসনের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর গুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সংস্কারের অভাবে আবাসন থেকে অনত্য চলে যাচ্ছে আবাসনে থাকা পরিবার গুলো।

কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার ২০০৭ সালে নির্মিত হয় আশ্রয় প্রকল্প আবাসন ১ হাসদিয়া আবাসন, ২ পৌর আবাসন, ৩ নন্দলালপুর আবাসন। লালন আবাসন যদুবয়রা ৬০ টি, পৌর আবাসনে ৬০ টি, নন্দলালপুর আবাসনে ৬০ টি মোটা- ১৮০ টি ঘর নির্মাণ করা হয়। আবাসন ঘরে বসবাস করছে এখন মাত্র ৪০ টি পরিবার। ঘর গুলো ভেঙ্গে পড়েছে, নেই যাতায়াতের ব্যবস্থা। আবাসনের চার পাশে জঙ্গল হয়ে আছে। বহিরাগতদের আনাগোনায় আবাসনে থাকা পরিবার গুলো সন্ধ্যার পর থাকে ভয়ে। এর মধ্যে যদুবয়রা আবাসন ১ নদীর ভাঙ্গনে ভেঙে গেছে।

সুপ্রিয় পানি অভাবে বাসিন্দারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা হৃদয় হোসেন (৪০) আবাসনের ২ নম্বর ব্যারাকের ১০ নম্বর ঘরে থাকেন। তিনি বলেন, বৃষ্টির দিনে মাঠের চেয়ে আমার ঘরে পানি বেশি ওঠে। পলিথিন টাঙিয়েও বৃষ্টি ঠেকানো যায় না।

মুদি দোকানি শরিফুল ইসলাম (৪৫) ৩ নম্বর ব্যারাকের ২০/৫ নম্বর ঘরে পবিবার নিয়ে বসবাস করেন। তিনি বলেন, ঘর প্রতি তিন বান টিনের প্রয়োজন।

এখানকার চা বিক্রেতা নার্গিস (৪০) ২০/৫ নম্বর ঘরে থাকেন। তিনি বলেন, শীত মৌসুমে চালার টিন বদল করা না হলে আগামী বর্ষা মৌসুমে যত জায়গা থেকে পানি পড়বে সেই পানি ধরার জন্য ততটি হাড়ি পাতিলও ঘরে নেই।

২১/৫ নম্বর ঘরে থাকেন নুপুর বেগম। তিনি শহর থেকে শাড়ি/কাপর কিনে এনে আবাসনে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে সংসার চালান। তার ঘড়ের চালা দিয়ে আকাশ দেখা যায়। তিনি বলেন, গত বর্ষায় অন্য জায়গা গিয়ে থেকেছি। টিনের যে অবস্থা, তার চেয়ে ঘরের বেড়ার অবস্থা আরও খারাপ। যখন তখন ঘরের ভেতর সাপ ঢুকে পড়ে।

বাসিন্দাদের দুর্দশা নিয়ে আবাসন প্রকল্প ২ এর সভাপতি ওহাব মিয়া (৫০) বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় আবাসনের এসব সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোনও ব্যবস্থা নেননি। অনেক সময় বিভিন্ন কর্মকর্তা এখানে পরিদর্শনে এসে সংস্কারের কথা বলে চলে যান। জরাজীর্ণ ঘরতো আছেই, এছাড়া এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে নেই ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, নেই গোরস্থান।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় আমাদের শহরে গিয়ে উঠতে হয়। এখানে বসবাসরত পরিবারের কোনও সদস্য মারা গেলে দাফনের জন্য নিয়ে যেতে হয় দূরে অন্য কোন গোরস্থানে। সব মিলিয়ে বেশ দুর্দশায় আমরা বাস করছি। এখানকার বসবাসকারীদের একটাই দাবি দ্রুত যেন প্রতিটি ঘরের চালের টিন পরিবর্তন করে নতুন করে চালা তৈরি এবং টয়লেট ও গোসলখানাগুলো সংস্কার করে ব্যারাকগুলো বসবাসের উপযোগী করা হয়।

প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় কুমারখালী -খোকসা হিজলাকর – হিজলাবট আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০ টা ব্রাকের ১৮০ টি আবাসন ঘর হস্তান্তর করা হয়। বাংলাদেশ সেনা বাহিনির ৫ পদাতিক ডিভিশন কুমারখালী খোকসা গড়াই নদীর কুল ঘেসে হিজলাবট – হিজলাকর নামক স্থানে যথাক্রমে ১৬ টা ব্রাকে ৮০ টা পরিবারের আবাসন ঘর ও ১৪ টা ব্রাকে ৭০ টা আবাসন ঘর সব মিলে ৩০ টা ব্রাকে ১৮০ টা আবাসন ঘর দুই উপজেলার কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেন।

দেশের গৃহহীন মানুষের জন্য নিজস্ব আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার সরকার গঠনের পরই জাতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন তারই কন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজারসহ আশপাশের জেলাগুলো ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হওয়ায় বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। ওই এলাকা পরিদর্শন করে উদ্বাস্তু মানুষগুলোর জন্য তখনই তিনি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দেন। ওই বছরই সরকার গ্রহণ করে ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্প।

কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল জানান, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। যতো দ্রুত সম্ভব আবাসনের ঘর গুলোর মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর