২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন। হানিফ সে সময় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়। এসব নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাথে জাসদের টানাপোড়েন তৈরি হয়, যা চলে আসছে। ভেড়ামারায় জাসদের শক্ত অবস্থান আছে। মিরপুর উপজেলাতেও দলটির নেতা-কর্মি ও সমর্থক আছে। তবে সাংগঠনিকভাবে ভেড়ামারার তুলনায় মিরপুরে দূর্বল। যার প্রমাণ মেলে সর্বশেষ পৌর ও ইউপি নির্বাচনে। ভেড়ামারা পৌরসভা ও চাঁদগ্রামে ইউনিয়নে জয়ী হয় জাসদ। তবে আগের থেকে জাসদের জনপ্রতিনিধি কমেছে। এখন সেগুলো আওয়ামী লীগের দখলে।
ভেড়ামারা উপজেলা জাসদের সাধারন সম্পাদক আনসার আলী বলেন, আগে কিছুটা ঝামেলা থাকলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাসদের সম্পর্ক ভাল। জাসদ আগের তুলনায় সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ। আগামী নির্বাচনে ইনু ভাই এ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত আছেন। ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি হানিফের বড় ভাই রফিকুল আলম চুনু আর সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র শামীমুল ইসলাম ছানা। আর জেলা জাসদের সাধারন সম্পাদক আব্দুল আলীম স্বপনের বাড়ি এ উপজেলায় হওয়ায় তিনি জাসদের নেতৃত্ব দেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শামীমুল ইসলাম ছানা বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। আমাদের ভোট করার স্বপ্ন আছে। আমি নিজেই মনোনয়ন চাইতে পারি। জাসদ বা ইনু সাথে সমন্বয় করার কোন ইচ্ছা আমাদের নেই উপজেলা। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সংগঠনও ইনুকে প্রার্থী হিসেবে চান না। তাদের অনেকে মাহবুবউল আলম হানিফকে এ আসনে ফের প্রার্থী হিসেবে চান। ভেড়ামারার সন্তান কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাগরিক কমিটির সভাপতি ডা: এসএম মুস্তানজীদ প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন নানা সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে।
মুস্তানজীদ নির্বাচন করার ব্যাপারে বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক। দীর্ঘদিন থেকে এলাকার মানুষের সেবা করে আসছি। আগ্রহ আছে নির্বাচন করার। নির্বাচন করলে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করব। তবে জাসদ তাকে গোনায় ধরছে না। জাসদের অনেকে মনে করেন ইনুকে ডিস্ট্রাব করতেই মুস্তানজীদকে দিয়ে খেলানো হচ্ছে। ডা. মুস্তানজীদের পাশাপাশি কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের আরেক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. ইফতেখার মাহমুদ নির্বাচন করার জন্য মাঠে আছে বেশ কয়েক বছর ধরে। তিনি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, গরীব-দুস্থদের মাঝে সহযোগিতা, শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি প্রদানসহ নানা সামাজিক কর্মকান্ড করে সাড়া ফেলেছেন। এদিকে মিরপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও জাসদ নেতাদের মধ্যে দূরত্ব অনেক। ভেড়ামারায় দুই দলের নেতারা মাঝে মধ্যে এক টেবিলে বসলেও মিরপুরে এ চিত্র চোখে পড়ে না। মিরপুরের নেতারা চান ইনুর পরিবর্তে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হোক। এখানে দুই দলের জটিল সমীকরন।
সর্বশেষ উপজেলা, পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে মিরপুরে জাসদের ভরাডুবি হওয়ার কারণে দ্বন্দ্বে আলাদা মাত্রা যোগ হয়েছে। আগে জাসদের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধি থাকলেও এবার তা শুন্য। সর্বশেষ স্থানীয় সরকারের তিনটি নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ-জাসদ মুখোমুখি অবস্থান নেয় এ উপজেলায় সংঘর্ষ হয় একাধিকবার। পুড়িয়ে দেওয়া হয় নির্বাচনী ক্যাম্প ও মটর সাইকেল। মামলা হয় একাধিক। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন জাসদ বিরোধী শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা হিসেবে পরিচিত।
জাসদের প্রার্থীদের ধরাশায়ী করে দলীয় প্রার্থীদের জয়ী করতে কামারুলের শক্ত অবস্থান ছিল বলে মনে করেন জাসদের নেতা-কর্মীরা। যার ফলে উপজেলা ও ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে সুবিধা করতে পারেননি জাসদ, উল্টো মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাদের। উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের বেশির ভাগ মনে করেন, জাসদ তাদের ওপর ভর করে নির্বাচনী জয়ী হয়ে আসছে। ভোটের পর জাসদ নেতারা তাদের আর মূল্যায়ন করেন না। এমনকি কোন সুযোগ-সুবিধা আওয়ামী লীগ নেতা- কর্মীরা পায় না। এবার এ বিষয়ে শক্ত অবস্থানে যাওয়ার ঘোষনা তাদের। অনেকে মনে করেন, মিরপুর ও ভেড়ামারা দুই উপজেলাতেই কামারুল আরেফিনের শক্ত অবস্থান ও জনপ্রিয়তা থাকায় তাকে নিয়ে জাসদের অনেকের ভীতি আছে। তারা মনে করেন কামারুলকে বশ করতে পারলে অন্য নেতাদের সহজে ম্যানেজ করা যাবে।
মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন বলেন, শেখ হাসিনার হাত ধরে ভেড়ামারা-মিরপুরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তবে একটায় কষ্ট স্বাধীনতার পর নানা কারণে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের কেউ এমপি হতে পারেনি। তাই আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের দাবি আগামী নির্বাচনে দলের নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হোক।
মিরপুর উপজেলা জাসদ সভাপতি আহম্মদ আলী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাথে জাসদের কিছুটা দূরত্ব বেড়েছে। সব দলেই বিভক্তি আছে, থাকবে। স্থানীয়ভাবে কিছুটা সমস্যা থাকলেও নির্বাচন সামনে সেটা দূর হয়ে যাবে।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, আমার সময়ে দুই উপজেলার মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে, পাকা সড়কে চলতে পারে। স্কুল-কলেজের উন্নয়ন হয়েছে। এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য আগামীতে অর্থনৈতিক জোন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মহাজোট ঐক্যবদ্ধ আছে, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় আওয়ামী লীগের সাথে ভাল সম্পর্ক বিরাজ করছে।