“শরৎ, তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি। ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি। শরৎ, তোমার শিশির-ধোওয়া কুন্তলে, বনের-পথে-লুটিয়ে-পড়া অঞ্চলে। আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি।” এমন গানের সাথে প্রকৃতিও যেন মিলিয়েছে সুর-তাল-লয়। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে শরতের নীল-সাদা আকাশের নীচে হাওয়ায় দোল খায় বুনো মেঘ কাশফুল।
ঋতু পরিক্রমায় শরৎ এখন শেষের পথে। তবুও নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের ভেলা জানান দিচ্ছে শরৎ এর উপস্থিতি। এরই মাঝে পদ্মা নদীর চরে শুভ্রতা ছড়াচ্ছে কাশবনের অপরূপ সৌন্দর্য তাই প্রতিদিন বিকেল হলেই প্রকৃতির স্নিগ্ধতার পরশ নিতে ভিড় জমাচ্ছেন প্রকৃতি প্রেমীরা। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলায় পদ্মার জলে এ যেন প্রকৃতির এক ভিন্ন মহিমা।
শরতের শেষে এই কাশবনগুলো হয়ে ওঠে জীবিকার উপাদানও। কাশের খড় ব্যবহৃত হয় কৃষি কাজের নানা প্রয়োজনে।
উপজেলার ফিলপনগর ইউনিয়নের আবেদের ঘাট এলাকার পদ্মা পাড়ে দাঁড়ালে দেখা যায় সাম্প্রতিক বন্যার পানি নেমে যাওয়া চরের পলি মাটিতে মাথা উচু করে দাড়িয়ে দুলছে বিস্তীর্ণ কাশবন। ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে কাশবনে ছুটছে মানুষ।
কাশফুলের সাথে মিলেমিশে একাকার হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। ক্যামেরা বা মুঠোফোনে ছবি তোলায় মেতে উঠছেন সেখানে।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন পদ্মার চরে কাশবনে বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী সুজন হোসেন। নিজের স্মার্ট ফোনে ছবি তুলছেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে। কে যেন বলে উঠলো– আকাশ,কাশফুল সব যেন ছবিতে থাকে!
ছুটির দিন মানেই পদ্মা পাড়ের কাশবনে সৌখিন মানুষদের ভিড়। এপারে জমে ওঠে গ্রামীণ খাবারের রসনা। দেশের বড় উপজেলা গুলোর একটি দৌলতপুর, প্রায় ৮ লাখ মানুষের এই অঞ্চলে তেমন কোন বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় বিনোদন প্রেমিরা ছুটে আসেন এই পদ্মার বুকে।
কথা হয় পদ্মার পাড়ে ঘুরতে আসা স্বাধীন হোসেনের সাথেও তিনি জানান, কর্মব্যস্ত একঘেয়েমি জীবন থেকে একটু অবকাশের প্রোয়জন হলে আমরা সাধারণত এখানেই আসি। আর, শরৎ আসলে বাড়তি আনন্দ দেয় নদীর পাড়ের কাশবন আর আকাশের অপরূপ দৃশ্য।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যাবসায়ি জানান, পদ্মা নদীর পাড়কে কেন্দ্র করে যদি ভালো মানের বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়, তাহলে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে একটি বড় ভূমিকা রাখবে।
বৃহত্তর এই উপজেলাটির বিনোদন প্রেমিদের জন্য বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা ভাবছেন উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য আঃকাঃমঃ সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ মামুন।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন, বিনোদন কেন্দ্রের বিষয়টি আমাদের আলোচনায় আছে। আমরা পদ্মার পাড়ে হোটেল ও পর্যটন কেন্দ্রের কথা ভাবছি। তাছাড়া কেউ যদি ব্যক্তি উদ্যোগে করতে চাই আমরা সহযোগিতা করবো। এ ছাড়া উপজেলা কেন্দ্রীক কোন স্থান পেলে আমরা সেখানেও চেষ্টা করবো।
শরৎ শেষে এই পদ্মা শুকিয়ে হয় এঁকেবেঁকে চলা এক ছোট্ট নদী, যার পাড় ঘেঁষে কেবল কৃষি ক্ষেত।