সারাদেশে সুস্থ ধারায় সংস্কৃতি চর্চা, খেলাধুলা ও নারী পুরুষের বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে সরকার কিশোর—কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের বিশেষ উদ্যোগ নেই ২০১৮ (প্রথম সংশোধিত) সালে, শেষ ২০২৩ সালে। ৫৫১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার প্রকল্পের আওতায় ৬৪ জেলায় ৪ হাজার ৮৮৩টি ক্লাব স্থাপন করেন সরকার।
সেই ধারাবাহিকতায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায়, ১৪টি ইউনিয়নে ১টি করে ক্লাব স্থাপন করা হয়। কিন্তু কিশোর—কিশোরী ক্লাবের শিক্ষার্থীদের নাস্তার টাকায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌসের বিরুদ্ধে। ক্লাব গুলোতে জনপ্রতি ৩০ টাকার নাস্তার পরিবর্তে দেয়া হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকার নাস্তা। আর বাকি টাকাই চলে যাচ্ছে কর্মকর্তার পকেটে। এতে করে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সুবিধাভোগীরা। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে প্রকল্পের কাগজে ও বাস্তবে ব্যাপক গড়মিল।
উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কাগজে—কলমে ৩০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও উপস্থিত পাওয়া গেছে ১০—১৫ জন। কিন্তু প্রতিদিনই ওই সব কেন্দ্রে শিক্ষকসহ ৩৫ জন উপস্থিত দেখিয়ে নাস্তার টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। ক্লাবের শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদেরকে ছোট কেক আর কলা দেয়া হয়। এই নাস্তার মূল্য ১০ থেকে ১২ টাকা।
এদিকে গত বছর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মর্জিনা খাতুন কর্মরত থাকা কালিন নিম্নমানের ক্রীড়া সামগ্রী ও বাদ্যযন্ত্র সরবরাহ করে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সে—সব বাদ্যযন্ত্র এখন বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ক্লাবের শিক্ষক জানান ক্লাবে শিক্ষার্থীদের নাস্তা বাবদ ৩০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও নাস্তা দেয়া হয় ১০—১২ টাকার। জেন্ডার প্রমোটার আসাদুজ্জামান লিটু কে জানালে তিনি বলেন বরাদ্দ ৩০ টকার জায়গায় ২০ টাকা করা হয়েছে, এর মধ্যে তেল খরচ বাবাদ ২ টাকা আমার।
শিক্ষকরা আরো বলেন তাদের ক্লাবে সকল বাদ্যযন্ত্র একেবারে নিম্ন মানের দেওয়া হয়েছে যা বছর যেতে না যেতে নষ্ট হয়ে গেছে, এক বছর যাবৎ হারমোনিয়াম নষ্ট তাল যন্ত্র তবলা যেটা দিয়েছে সেটাতে তাল ওঠেনা। ২০২২ সাল কোন রকম বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই কিশোর কিশোরীদের সেসন শেষ করতে হয়েছে। নতুন বছর বাদ্য যন্ত্র না থাকায় ছাত্র ছাত্রী ভর্তি হতে অনিহা প্রকাশ করছে। শিক্ষকরা অন্যায়ের প্রতিবাদ জানালেও কোন কাজ হয়নি বরং তার দোসর জেন্ডার প্রমোটার আসাদুজ্জামান লিটু কে দিয়ে হুমকি দিতেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মর্জিনা খাতুন। আর এখন শিক্ষার্থীদের নাস্তার টাকা হরিলুট হচ্ছে।
জেন্ডার প্রমোটার আসাদুজ্জামান লিটুর সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন সরকারী ফিস কেটে যে টাকা থাকে সেই টাকার নাস্তা দেওয়া হয়। আপনি আসেন খাতা কলমে হিসাব পুঁজিয়ে দিচ্ছি।
এই বিষয়ে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সরকার আমিরুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলের ছেলে—মেয়েদের সংস্কৃতি মনা করে তোলার জন্য সরকারের যে উদ্দেশ্য ছিল, সেটা অসৎ কিছু সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। দৌলতপুরে কিশোর কিশোরী ক্লাব গুলোর জন্য যে বাদ্যযন্ত্র দেওয়া হয়েছিল সেগুলো খুবই নিম্নমানের হওয়ার কারনে তৎকালীন সময় আমরা সেগুলো ফেরত দিয়েছিলাম। কিন্তু তৎকালীন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আবারও সেগুলোকে নতুন করে রং লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট ক্লাবগুলোকে হস্তান্তর করে। সে বাদ্যযন্ত্রগুলো অচল হয়ে পড়ে আছে। এতে সরকারের যে মহৎ উদ্যোগ সেটা ব্যাহত হচ্ছে। আমি চাই সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এই দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক।
শিক্ষার্থীদের নাস্তায় অনিয়মের ব্যাপারে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিশোর—কিশোরী ক্লাবে কোন অনিয়ম নাই কার্যক্রম সুষ্ঠ ভাবে চলছে। দৌলতপুরে প্রতিটি ক্লাবে ৩০ জন শিক্ষর্থীর নাস্তার বরাদ্দ আসে সে কারণে আমি ৩০ জনের নাস্তা দেয়। নিম্ন মানের নাস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন ফিল্ড সুপারভাইজার মনিটরিং করে, আমি ফিল্ড সুপারভাইজারের সাথে কথা বলে বিষটি দেখছি। বাদ্যযন্ত্র বা তালযন্ত্রের বিষয়ে তিনি বলেন সরকারী বরাদ্দ আসলে আমরা সেটা মেরামত করে দেব।
সুপাভাইজার কাবিল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন ১জন সুপারভাইজার ৩—৪টা উপজেলার দায়িত্বে আছে, তাই জেন্ডার প্রমোটারদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ওবায়দুল্লাহ বলেন, এবিষয়ে আমার কাছে কোন অভিযোগ দেওয়া হয়নি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন সোনার বাংলা গড়তে দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে তখন কিছু আমলারা স্ব—হস্তে দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলছেন সশীল সমাজ। অচিরেই অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিকার চান কিশোর—কিশোরী ক্লাবের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।