বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৭ অপরাহ্ন

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে খবরে সুরাহা নেই শেষে অগ্নিকাণ্ড

কুষ্টিয়ার সময় প্রতিবেদক / ৯৫ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৪, ৫:৪৮ অপরাহ্ন

জ্বালানী তেলের বড় মজুদে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে। এতে গুরুতর ভাবে দগ্ধ অন্তত ৩জন। টাকার ক্ষতি ছাড়িয়েছে কোটির ঘর। এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার আভাস জানিয়ে এর আগে মোটা দাগে খবর প্রকাশ হলেও কোনো সুরাহা আসেনি। অনিয়ম-অসতর্কতার সাথেই চলছে জ্বালানি তেলের মজুদ ও ক্রয়-বিক্রয়। নেই নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা।

বুধবার রাতে দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর গরুর হাট সংলগ্ন বাজারে অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে। বিশ্বাসযোগ্য একাধিক সুত্রে জানা গেছে, রাত ১১ টার পর জিম অ্যান্ড মিম এন্টারপ্রাইজের ঝুঁকিপূর্ণ তেল মজুদের স্থানে কুষ্টিয়া স্টোরের একটি তেলবাহী গাড়ি থেকে তেল নামানোর সময় আগুন লাগে। মুহুর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং মজুদাগারে রাখা তেল ভর্তি প্লাস্টিক ও লোহার কন্টেইনার বিস্ফোরিত হতে থাকে। এসময় ওই এলাকায় তীব্র আগুনে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। এতে তেলবাহী গাড়ির কর্মী মিলন হোসেন ও মিম এন্ড জিম এন্টারপ্রাইজের কর্মী হোসেন আলী সহ অপর আরও দুই ব্যক্তি অগ্নিদগ্ধ হয়, তারা চিকিৎসাধীন। প্রথমে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে দু’টি এবং পরে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা থেকে আরও তিনটি, মোট পাঁচটি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট টানা আড়াইঘন্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়।

অনিয়মে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটির সত্বাধীকারী হাসিবুর রহমান জানান, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ড হতে পারে। এতে দুই কোটি টাকা ক্ষতির সম্ভাবনা।

ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার শরীফুল ইসলাম বলেন, আগুনের সুত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তদন্তের পর বলা যাবে। গোটা দোকানটিই পুড়ে গেছে।

উল্লেখ্য, দৌলতপুর উপজেলার আখ সেন্টার মোড় এলাকার ব্যবসায়ী মজনু রহমান, হোসেনাবাদ বাজার এলাকার ব্যবসায়ী আতাউর রহমান একই এলাকার ব্যবসায়ী রিপেল, মথুরাপুর গরুর হাট সংলগ্ন বড় বাজার এলাকার ব্যবসায়ী হাসিবুর রহমান ও তারাগুনিয়া ফারাকপুর রোডের হানিফ হাজার-হাজার লিটার ডিজেল-পেট্রোল-অক্টেন মজুদ করে নিয়মবহির্ভূত ভাবে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ ছোট মজুদের নিয়মবহির্ভূত ব্যবসা চলছে দৌলতপুরের বিভিন্ন জায়গায়।

এসব মজুদদাররা দেখাচ্ছেন কাগুজে অনুমতিপত্র, কোথাও আবার তাতেও সংকট। প্রকৃতপক্ষে কেউই মানছেন না যথাযথ নিয়ম, নির্দেশনায় সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি দেখিয়ে সংরক্ষণ ও কেনা-বেচা করার কথা বলা হলেও এসবের কোন ছাপই নেই এখানকার ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়। দশ হাজার থেকে ৪০ হাজার লিটার পেট্রোল মজুদ করা হচ্ছে অনিয়মের বিপদজনক ঘরে। কোনো ঘরে পেট্রোলের কন্টেইনার ঘেঁষে ইলেকট্রিক লাইন, কোনো মজুদাগারেই বৈদ্যুতিক সংযোগের সন্তোষজনক ব্যবস্থাপনা নেই। কেউ আবার, একটি মজুদঘরের অনুমতি নিয়ে চালাচ্ছেন একাধিক। বিশেষ ধরনের অবকাঠামোর ঘর সহ কন্টেইনার রাখার দুরত্বের কথা গুরুত্ব দিয়ে বলা হলেও কেউই মানছেন না এসব নিয়ম। তামার তারের ব্যবহার, ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার মতো কয়েকপদের নির্দেশ নিয়ে ভাবাই দুষ্কর। ঝুঁকি জেনেও মজুদদাররা রাখেননি নির্দেশনা অনুসারে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। কেউ কেউ মজুদ করছেন গোপন মজুদাগারেও।

পর্যবেক্ষণে পাওয়া যায় সাধারণত এককালীন বিনিয়োগে ফাঁকি এবং ব্যবসায় মাত্রাতিরিক্ত লাভের প্রত্যাশায় উপজেলাটিতে তদারকি সংশ্লিষ্টদের বেখেয়ালে ভয়াবহ ঝঁকিপূর্ণ এই প্রেক্ষাপট তৈরি করেছেন হাতে গোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী। তেল মজুদ ও ক্রয়-বিক্রয়ে মানছেন না নিয়ম।

খুলনা বিভাগীয় বিস্ফোরক পরিদর্শক ডক্টর মো: আসাদুল ইসলাম বলেন, আগুনের বিষয়টি অবগত হয়েছি। অনতিবিলম্বে পরিদর্শন করে প্রতিটি অভিযুক্ত স্থানের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে গণমাধ্যমকে তিনি জানান, এধরনের মজুদদাররা সাধারণত লাইসেন্স গ্রহণের সময় এক রকমের প্রেক্ষাপট দেখান, পরে ব্যবসা পরিচালনা করেন নিজেদের খেয়ালখুশি মতো, যা ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ। ব্যবসায়ীরা প্রতারণামূলক আচরণ করে নিজেসহ অন্যকে জীবনের ঝুঁকিতে রাখছেন। দ্বিতীয় শ্রেণীর মজুদদাররা পেট্রোল মজুদ করতে পারবেন না বলেও জানান তিনি। খুলনা থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং সম্ভব না এমনকি জনবল সংকটে নিয়মিত মনিটরিংও কঠিন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে স্থানীয় ভাবে উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

দৌলতপুর থানার ওসি আওয়াল কবির জানান, এ ধরনের জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পদক্ষেপে যাবতীয় সহযোগিতার জন্য দৌলতপুর পুলিশ সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ওবায়দুল্লাহ্ বলেন, এধরণের বেশকিছু ঝুঁকিপূর্ণ স্থান আছে বলে তথ্য পেয়েছি। পরিদর্শন করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর